যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ আমল

﷽🕋

➖➖➖➖➖◄❖►➖➖➖➖➖
জিলহজ্জ মাসের ১০টি আমল সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলঃ    

(১) যিলহজ্জের প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা; বিশেষত আরাফার দিনের রোজাঃ
.
নবীজির একজন স্ত্রী বর্ণনা করেন, ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহজ্জ মাসের ৯ দিন, আশুরার দিন এবং প্রতি মাসের তিন দিন রোজা রাখতেন।’’ [আবু দাউদ, আস-সুনান: ২/৪৬২, সনদ সহিহ]
.
অন্য হাদিসে নবীজি বলেন, ‘‘আরাফার দিনের রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর নিকট আশা করি যে, তিনি এর দ্বারা বিগত বছর ও আগামী এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ১১৬২]
.
(২) আন্তরিকভাবে তাওবাহ্ করাঃ
.
আল্লাহ্ বলেন, ‘‘অবশ্যই আল্লাহ তাদের তাওবাহ কবুল করবেন, যারা ভুলবশত মন্দ কাজ করে, অতঃপর দেরি না করেই (দ্রুত) তাওবাহ করে। এরাই হলো সেসব লোক, যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।’’ [সূরা নিসা, আয়াত: ১৭]
.
(৩) গুরুত্বের সাথে ফরজ ইবাদতগুলো আদায় করা এবং সাধ্যানুযায়ী অধিক পরিমাণে নফল আদায় করাঃ
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘বান্দা যা কিছু দিয়ে আমার নৈকট্য লাভ করে থাকে, তার মধ্যে আমার নিকট প্রিয়তম হলো সেই ইবাদত, যা আমি তার উপর ফরজ করেছি। আর, সে নফল ইবাদত দ্বারাও আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। অবশেষে আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ৬৫০২]
.
(৪) এই দশ দিন নখ ও চুল না কাটাঃ
.
নবীজি বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখলে এবং কুরবানি করার ইচ্ছা করলে, সে যেন তার চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ১৯৭৭]
.
এই হাদিস থেকে জানা গেলো, কুরবানিদাতা যিলহজ্জ মাস শুরু হয়ে গেলে ১০ তারিখের আগে চুল ও নখ কাটবেন না। তবে, অন্য হাদিস থেকে বোঝা যায়, যারা কুরবানি দেবে না, তারাও নখ ও চুল কাটবে না। (তবে, এটি জরুরি নয়, উত্তম)
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি কুরবানির দিন সম্পর্কে আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ তা’আলা তা এই উম্মতের জন্য ঈদ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এক ব্যক্তি বললো, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্! যদি আমার কাছে শুধু একটি মানিহা থাকে (অন্যের থেকে নেওয়া দুগ্ধ দানকারী উটনী—তবুও কি কুরবানি দিতে হবে?)’ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, না; বরং সেদিন (অর্থাৎ, ঈদের দিন) তুমি তোমার চুল কাটবে, নখ কাটবে, গোঁফ ও নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহ তা’আলার কাছে তোমার পূর্ণ কুরবানি বলে গন্য হবে। [আহমাদ, আল-মুসনাদ: ৬৫৭৫, ইমাম হাকিম, ইবনু হিব্বান, মুনযিরি, তাবারানি, যাহাবি, শুয়াইব আরনাউত্ব (রাহিমাহুমুল্লাহ্)-সহ মুহাদ্দিসগণ হাদিসটির সনদ হাসান (গ্রহণযোগ্য) বলেছেন]

.
এই হাদিসে ঈদের দিনে নখ ও চুল কাটতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ, প্রথম ৯ দিনে না কেটে একেবারে ঈদের দিনে কাটলে আল্লাহর নিকট পূর্ণ কুরবানির নেকি পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ্।
.
(৫) বেশি পরিমাণে আল্লাহর যিকর করাঃ
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলার নিকট যিলহজ্জের দশ দিনের আমলের চেয়ে মহান এবং প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। সুতরাং, তোমরা সেই দিনগুলোতে অধিক পরিমাণে তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ), তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ), তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্) ও তাকবির (আল্লাহু আকবার) পড়ো।’’ [আহমাদ, আল-মুসনাদ: ৫৪৪৬ সনদ সহিহ]
.
(৬) সামর্থ থাকলে হজ ও উমরা করাঃ
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করলো এবং অশ্লীল কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকলো, সে ঐ দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ থেকে ফিরে আসবে, যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হয়েছিল।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ১৫২১, মুসলিম, আস-সহিহ: ১৩৫০]
.
আল্লাহর রাসূল আরও বলেন, ‘‘এক উমরা আরেক উমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহের ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ১৭৭৩, মুসলিম, আস-সহিহ: ১৩৪৯]
.
(৭) সামর্থবান হলে কুরবানি করাঃ
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কুরবানির দিনে আদম-সন্তান এমন কোন কাজ করতে পারে না, যা আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত করা তথা কুরবানি করার চেয়ে বেশি প্রিয় হবে। (কুরবানির পশুগুলোকে) তাদের শিং, পশম ও খুরসহ কেয়ামতের দিন আনা হবে। (কুরবানির পশুর) রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর নিকট সম্মানজনক স্থানে পৌঁছে যায়। সুতরাং, তোমরা প্রফুল্লচিত্তে কুরবানি করো।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ১৪৯৩, হাকিম, আল-মুসতাদরাক: ৭৫২৩, হাদিসটি সহিহ]
.
(৮) বেশি পরিমাণে তাকবির (আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব) পাঠ করাঃ
.

اَللّٰهُ أَكْبَرْ اَللّٰهُ أَكْبَرْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرْ اَللّٰهُ أَكْبَرْ وَلِلّٰهِ الْحَمْد

.
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার; ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
.
এটি ইবনু মাস‘ঊদ (রাদিঃ) ও অন্যান্য পূর্বসূরিদের থেকে প্রমাণিত। [আলবানি, ইরওয়াউল গালিল: ৩/১২৫]
.
আরাফার দিন অর্থাৎ যিলহজ্জের ৯ তারিখ ফজর থেকে শুরু করে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর একাকী বা জামাতে নামাজ আদায়কারী, নারী অথবা পুরুষ,—প্রত্যেকের জন্য একবার তাকবিরে তাশরিক (উপরে বর্ণিত তাকবিরটি) পাঠ করা ওয়াজিব। পুরুষরা উচ্চ আওয়াজে বলবে, তবে নারীরা নিচু আওয়াজে বলবে। [ফাতাওয়া শামি: ৩/৬১]
.
আর সাধারণভাবে প্রথম দশ দিন আল্লাহর বড়ত্বের যেকোনো বাক্যই বেশি বেশি পড়া উচিত। যেমনঃ আল্লাহু আকবার কাবিরা, ওয়ালহামদুলিল্লাহি কাসিরা অথবা আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ কিংবা উপরের তাকবিরটি।
.
(৯) চারটি সম্মানিত মাসের একটি হলো যিলহজ্জ; তাই এই মাসের সম্মানে যথাসম্ভব সকল গুনাহ থেকে বেঁচে থাকাঃ
.
আল্লাহ্ বলেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট সংরক্ষিত ফলকে (বছরে) মাসের সংখ্যা বারোটি—আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি (মাস) সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা (গুনাহ করার মাধ্যমে) নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না।” [সূরা তাওবাহ, আয়াত: ৩৬]
.
(১০) সাদাকাহ্ করাঃ
.
নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “প্রত্যেক ব্যক্তি (হাশরের মাঠে) তার সাদাকার ছায়াতলে থাকবে, যতক্ষণে লোকদের মাঝে ফয়সালা শেষ না হয়।” [আহমাদ, আল-মুসনাদ; আলবানি, সহিহুল জামি’: ৪৫১০, হাদিসটি সহিহ]
.




এছাড়াও এই দশ দিনে আমরা যেসব গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল করতে পারিঃ
.
মা-বাবার খেদমত;
প্রতিবেশির হক আদায়;
মানুষের দুঃখ দূরীকরণ;
দুরুদ ও ইস্তিগফার পাঠ;
মানুষের প্রয়োজন পূরণ;
লোকদের বিবাদ মেটানো;
অসুস্থ ব্যক্তির সেবা-সুশ্রূষা;
আত্মীয়তার বন্ধন সুদৃঢ়করণ;
কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত;
সকল শ্রেণির মুসলিমের জন্য দু‘আ;
শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় ইত্যাদি ||
.
© 

 

No comments

Powered by Blogger.